রবিবার, ২ আগস্ট, ২০২০

আদিনা মসজিদের দেয়ালে, গণেশ সহ বিভিন্ন মূর্তি কেন?

আদিনা মসজিদের দেয়ালে,
গণেশ সহ বিভিন্ন মূর্তি কেন?
আদিনা মসজিদ পশ্চিমবঙ্গের মালদহ জেলার পাণ্ডুয়াতে অবস্থিত। মসজিদটি কেবল বাংলায়ই নয়, গোটা উপমহাদেশের অন্যতম বৃহত্তম মসজিদ। এর পেছনের দেয়ালে প্রাপ্ত একটি শিলালিপি অনুসারে এটি ১৩৭৩ খ্রিস্টাব্দে ইলিয়াস শাহের পুত্র সিকান্দর শাহ কর্তৃক নির্মিত হয়েছে। তবে ভারতীয় পুরাতত্ত্ব সর্বেক্ষণের মতে ১৩৬৪ থেকে ১৩৭৪ সালে এটি নির্মিত হয়। মসজিদটি যে এক বা একাধিক মন্দির ধংস করে সেই ভিত্তির উপরেই সম্প্রসারিত হয়েছে এটা একরকম সুস্পষ্ট। কালো পাথরের উপরে টেরাকোটার কাজ এ দু'রকমের স্থাপত্যশৈলী দেখা যায়; যা দুইরকমের, দুই সময়ের নির্মাণশৈলীকে চিহ্নিত করে। প্রাচীন অংশ, অর্থাৎ কালো পাথরের অংশে এখনও বিভিন্ন দেবদেবী মূর্তি বিশেষ করে নৃত্যরত গণেশমূর্তি সুস্পষ্ট। এছাড়া নৃত্যরত গন্ধর্বমূর্তি, কীর্তিমুখ, প্রায় অধিকাংশ স্থানেই পবিত্র স্বস্তিকা চিহ্নের ব্যবহার আজও দেখা যায় মসজিদটি জুড়ে। সবচেয়ে মজার বিষয় বাঙ্গালীর স্বস্তিকা হিসেবে পরিচিত, বাঙ্গালীর সকল মঙ্গলঘটে আঁকা থাকে যে পুত্তলিকা চিহ্ন; এ চিহ্নও মসজিদের বিভিন্ন স্থানে খোদিত। মসজিদটির দেয়ালে একটি ঝুলন্ত মঙ্গলঘটের উপরে প্রদীপ দেখা যায়। এ সকল হিন্দু ধর্ম এবং সংস্কৃতি সংক্রান্ত বিভিন্ন পুরাতাত্ত্বিক নিদর্শন, কোন মসজিদের অভ্যন্তরে কখনোই থাকার কথা না। সম্পূর্ণ মসজিদটি ভাল করে পর্যবেক্ষণ করলে, বিভিন্ন স্থানেই খোদিত মূর্তি তুলে ফেলার নিদর্শন পাওয়া যায়। এরপরে আজও বেশকিছু ভগ্ন মূর্তির নিদর্শন বিদ্যমান মসজিদটিতে।
মসজিদটি পূর্বে যে প্রাচীন পাথরের মন্দির ছিল, এর সত্যতা ভারতীয় পুরাতত্ব সর্বেক্ষণের যে বোর্ড টানানো আছে এতেও ইঙ্গিত দেয়া আছে। সে বোর্ডে ( দ্বিতীয় ছবি ) লেখা আছে, " মসজিদে ব্যবহৃত সুবিন্যস্ত প্রস্তরখণ্ডগুলি আংশিকভাবে পূর্ব-স্থাপত্য কীর্তি হইতে সংগৃহীত " - এ লাইনটি ভাল করে পড়ে উপলব্ধি করলে, যে কেউ বুঝবে এর অন্তর্নিহিত অর্থ। বিশেষ করে, " পূর্ব - স্থাপত্য কীর্তি হইতে সংগৃহীত " - এ লাইনটিতেই সকল কথা বলা আছে।
🖋 শ্রী কুশল বরণ চক্রবর্ত্তী