সোমবার, ১৭ আগস্ট, ২০২০

*খনার বচন

*খনার বচন

পটল বুনলে ফাগুনে
ফলন বাড়ে দ্বিগুণে ॥
অর্থ- ফালগুন মাসে পটল চারা জমিতে বুনলে ভালো ফলন পাওয়া যায়।
চৈতের কুযা আমের ক্ষয়,
তাল তেঁতুলের কিবা হয় ॥
অর্থ- কুয়াশায় আমের বোল নষ্ট হয়ে যায়।
সুপারীতে গোবর, বাঁশে মাটি।
অফলা নারিকেল শিকর কাটি॥

অর্থ- সুপারী গাছের মূলে গোবর ও বাঁশের গোড়ায় মাটি দিতে হয়। নারিকেল গাছে ফল না ধরলে তার কিছু শিকড় কেটে দিতে হয়।
এগুলো খনার বচন। 

খনা একজন প্রাচীন বিদূষী এবং বাঙ্গালী নারী। যিনি ছিলেন একাধারে জ্যোতিষবিদ, গণিতজ্ঞ এবং কবি। বাংলা অঞ্চলে কথিত আছে শুভক্ষণে জন্মগ্রহণ করার কারনে তার নাম খনা বা “ক্ষনা”। আবার উড়িয়া ভাষায় খন বা খোনা শব্দের অর্থ বোবা। উড়িষ্যায় প্রচলিত আছে মিহির তার স্ত্রী লীলাবতীর জিব কেটে দেন বলে তার (লীলাবতীর) নাম হয় খোনা। আবার অনেক পন্ডিত মনে করেন “খনার বচন” যেহেতু আবহাওয়া, দিনক্ষণ এর সাথে জড়িত, তাই ক্ষন থেকে খন হয়ে খনা নামটির উৎপত্তি। অনুমান করা হয় খনার কাল ৮০০ থেকে ১১০০ খ্রিষ্টাব্দ। 
তবে বরাহ (৫০৫-৫৮৭) যদি খনার শ্বশুর হন তবে খনার আরও কয়েক শতক আগে জন্ম হওয়া উচিৎ। কিন্তু এদিকে “খনার বচন” গুলির ভাষা, আঙ্গিক ও বাক্য গঠনের রীতি দেখে ভাষা বিশেষজ্ঞদের মতামত “বচন” গুলির প্রাচীনত্ব চারশত বছরের বেশি হবে না। এটা ধরে নিলে খনার জীবনকাল ৮০০-১১০০ এর থেকে আরও কয়েক শতক পরে হওয়ার কথা। অধিকাংশ পন্ডিতরা মনে করেন খনার বচন এর রচনাকাল হয়তো গুপ্ত সাম্রাজ্যের সময়ে। অর্থাৎ খনার জীবনকাল গুপ্তযুগের, কিংবদন্তী সম্রাট বিক্রমাদিত্যের সমসাময়িক। সে সময় রাজা বিক্রমাদিত্যের রাজ্যের জ্যোতিষবিদ ছিলেন বরাহ। জ্যোতিষবিদ্যায় তার দখল ছিল বেশ। কথিত আছে, একদিন তার পুত্র মিহিরের কোষ্ঠী গণনা করে দেখতে পান তার আয়ু আর মাত্র এক বছর আছে। এত অল্প আয়ু দেখে আশা ছেড়ে দিয়ে ছেলেকে একটি পাত্রের মাঝে ভরে ভাসিয়ে দেন সমুদ্রের জলে। সেই পাত্র ভাসতে ভাসতে এসে ঠেকে সিংহল দ্বীপে। সিংহলের রাজা তাকে তুলে নিয়ে লালন পালন করতে থাকে। ছেলেটি বড় হলে নিজের কন্যা লীলাবতীর সাথে বিয়ে দেন। লীলাবতীই পরবর্তীতে খনা নামে সকলের কাছে পরিচিত হয়। খনার স্বামী মিহির একসময় পিতার সাথে রাজসভায় কাজে যোগ দেন এবং জ্যোতিষবিদ্যায় জ্ঞান লাভ করেন। একসময় তারা গণনায় একটি সমস্যা দেখতে পান। কোনোভাবেই যখন সেই সমস্যার সমাধান করা যাচ্ছিল না তখন সমস্যার সমাধান করে দেন লীলাবতী তথা খনা। সমাধান করে দৃষ্টি আকর্ষণ করেন রাজার। কিন্তু রাজার দৃষ্টি আকর্ষণ করলেও শ্বশুরের চক্ষুশূল হয়ে যায় খনা। কারণ তিনি ভাবেন খনার এই প্রজ্ঞায় মুগ্ধ হয়ে রাজা খনাকে তাঁর পরিবর্তে স্থান দিবেন রাজ সভায়। একপর্যায়ে খনার সাথে তার তর্কও হয়। একজন নারীর সাথে তর্কে না পেরে এবং রাজ সভার পদ হারানোর ভয়ে পুত্রকে আদেশ দেন খনার জিহ্বা কেটে নিতে, যেন আর কোনোদিন কথা বলতে না পারে। স্বামী ও শ্বশুর মিলে খনার জিহ্বা কেটে দেয়। সেখান থেকে প্রচুর রক্তক্ষরণ হতে থাকে। অতিরিক্ত রক্তক্ষরণেই খনা মৃত্যুবরণ করেন। কথিত আছে, জিহ্বা কেটে ফেলার আগে তিনি ফরিয়াদ জানিয়েছিলেন তার কিছু কথা বলার আছে, কারণ জিহ্বা কেটে ফেললে সেগুলো আর বলা সম্ভব হবে না। তাকে অনুমতি দেয়া হলো। একজন সে কথাগুলো লিখে রাখার চেষ্টা করলো কিংবা শ্রুতিতে ধরে রাখার চেষ্টা করলো। সেগুলোই পরবর্তীতে খনার বচন হিসেবে পরিচিতি লাভ করে।









 *গর্বের সাথে বলো আমি হিন্দু- কথাটি কে বলেছিলেন?

গর্বের সাথে বলো আমি হিন্দু -কথাটি বলেছিলেন স্বামী বিবেকানন্দ।
তাৎপর্য: হিন্দু ধর্ম সকল ধর্মের প্রসূতিস্বরূপ। সকল মত, পথ হিন্দু ধর্ম প্রশ্রয় দিয়েছে। আমেরিকার শিকাগোতে ধর্ম সম্মেলনে স্বামীজি এই কথা বলেছিলেন যে, পৃথিবীর সর্বপ্রাচীন  ধর্মের পক্ষ থেকে আপনাদের ধন্যবাদ জানাচ্ছি। যে ধর্ম সমান ভাবে সকল ধর্মকে সম্মান করে, আমি সেই ধর্মের অন্তর্ভুক্ত বলে নিজে গর্ববোধ করি। প্রকৃত উদারতা, মানবতা, সহানুভাবতা একমাত্র হিন্দু ধর্মের মধ্যে নিহিত আছে বলে স্বামী বিবেকানন্দ এমন উক্তি করেছিলেন।