রবিবার, ২১ ফেব্রুয়ারী, ২০২১

বন্ধুত্ব হোক কৃষ্ণ ও সুদামার মতো

আজ ফ্রেন্ডশিপ ডে,
বন্ধুত্ব দিবস !
৩০শে জুলাই যারা ফ্রেন্ডশীপ ডে পালন করেছে,ইয়া্ লম্বা লম্বা পোস্ট করেছে, স্ট্যাটাস দিয়েছে, তারা আমেরিকার ফ্রেন্ডসিপ ডে কে নিজেদের ভেবে ভুল করেছে ।।
ফ্রেন্ডশিপ ডে মানে এই নয়, যে নির্দিষ্ট দিনের জন্য সমস্ত বন্ধুত্ব সঞ্চিত থাকবে, বাকি দিন গুলো নিজের নিজের জায়গায় নিজ নিজ স্বার্থে পর্যবসিত থাকবো, এক্কেবারে আইসোলেটেড !
কোনো যোগাযোগ না
কোনো ভাব বিনিময় না,
এটা ফ্রেন্ডসিপ হতে পারে না ।
বন্ধুত্ব হোক কৃষ্ণ ও সুদামার মতো।
পরিস্থিতি,সুযোগ,কাল এর চক্রে আমরা পরস্পর যত দূরেই থাকি না কেন, সাক্ষাৎ হলে যেন পুনরায় একাত্মা, একপ্রান হয়ে যাই ।
এটাই থাকুক বন্ধুত্বের মূলমন্ত্র !
কৃষ্ণ ও সুদামার বন্ধুত্ব ও সৌহার্দ্যপূর্ণ সম্পর্কের একটি ছোট্ট গল্প বলি--
সুদামার শৈশবে একসাথে পড়াশুনা, খেলাধূলা করা অভিন্ন হৃদয়ের বন্ধু কৃষ্ণ সময়চক্রে একজন রাজা হয়েছিলেন। অন্যদিকে সেই সময় সুদামা আর্থিক দিক থেকে দুর্বল হয়ে পড়েছিলেন । তাঁর ভূসম্পত্তি, ঘর বাড়ি কিছুই ছিল না।
একদিন সুদামার স্ত্রী তাকে বললেন "দেখুন কৃষ্ণ আপনার খুব প্রিয় বন্ধু। আপনি কি তার কাছে কিছু সাহায্য চাইতে পারেন না?"
একথায় সুদামা অল্প লজ্জিত হয়ে বলেন "আমি আমার বন্ধুর কাছে কি করে সাহায্য চাইতে পারি ?
এটা‌ কি‌ আমার উচিত হবে ? "
সেই সময় সুদামা মানা করলেও,
যখন তার কাছে আর কোনও উপায় রইল না,
তখন তিনি কৃষ্ণের সাথে দেখা করতে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিলেন।
আমাদের সমাজের একটি প্রথা আছে যে আপনি যখন কারও সাথে দেখা করতে যাবেন, তখন আপনি খালি হাতে যাবেন না।
সুদামা মহা আপদে পড়লেন, তার তো কিছুই নেই। তার পোশাক ও ছিঁড়ে গেছে। তিনি এতটাই গরীব !
শেষমেষ কিছু না পেয়ে বাড়িতে থাকা চালভাজা নিয়েই চললেন কৃষ্ণের উদ্দেশ্যে, তিনি সেগুলিকে একটি কাপড়ের পুঁটলি তে নিয়েছিলেন।
দীর্ঘ পথ অতিক্রম করে তিনি কৃষ্ণের প্রাসাদে প্রবেশ করলেন,
প্রাসাদ খানা সুন্দরভাবে সজ্জিত,স্বর্ণালঙ্কার দিয়ে খচিত, মনিমুক্তার সমাহারে চারদিক ঢাকা ।
সুদামা যখন প্রাসাদে প্রবেশ করলেন তখন ভিতরে রাজসভা চলছে
কৃষ্ণ তাঁর সিংহাসনে বসে ছিলেন এবং আশেপাশে মন্ত্রী ও পারিষদ রা ।
সুদামার দেখা পাওয়া মাত্র, কৃষ্ণ ছুটে গেলেন তার কাছে , বন্ধুকে জড়িয়ে ধরলেন ।
দুধ দিয়ে প্রিয় বন্ধুর পা ধুইয়ে দিলেন । তাঁর নিজের সিংহাসনে বসালেন সুদামা কে, কৃষ্ণ যেহেতু, সব সময়ই রসিকতা করতে ভালোবাসেন, সুদামা ভরাসভায় লজ্জিত অনুভব করছেন, এটা দেখা সত্ত্বেও তিনি তাকে জিজ্ঞাসা করলেন, “তুমি আমার জন্য কী এনেছ? দেখাও "
সুদামা আরো লজ্জা পেলেন, রাজসভার চারদিক দেখে তিনি তার ছেঁড়া কাপড় দিয়ে তালি মারা পুঁটলি টিকে, তার উত্তরীয়ের আড়ালে লুকানোর চেষ্টা করলেন,
মনে মনে সুদামা বিড় বিড় করে যাচ্ছিলেন " এই ভরা সভাতে ঐ চালভাজা দেওয়া কি‌‌ ঠিক হবে ?"
কিন্তু তারা যে অভিন্ন হৃদয়ের বন্ধু, সুদামা র মনের কথা বোঝা মাত্র, কৃষ্ণ জোরপূর্বক পুঁটলি টিকে ছাড়িয়ে নিলেন, তার কাছ থেকে ।।
এক মুঠো চাল ভাজা মুখে পুরলেন কৃষ্ণ।
তা দেখে সুদামার চোখ ছলছল করে উঠলো , ভরা রাজসভা তে তারা যেন এক অন্য জগতে হারিয়ে গেলেন ।
সুদামা ভুলে ই গেলেন, কি‌ জন্য এসেছেন কৃষ্ণের দরবারে । কৃষ্ণ ও জিজ্ঞেস করলেন না, কেন‌ সুদামা এসেছেন তার কাছে ।
বন্ধুত্বে মহিমান্বিত হয়ে তারা ফিরে গেলেন যমুনার পাড়ে !
তার কিছু ক্ষণ পর সুদামা , কৃষ্ণের প্রাসাদ থেকে বিদায় নিয়ে রওনা দিলেন তার বাড়ির উদ্দেশ্যে ।
বন্ধুত্ব এরকমই থাকুক!
সবার সাথে‌ সবার ।।।