রবিবার, ২১ ফেব্রুয়ারী, ২০২১

হিন্দু ধর্ম অনুযায়ী কেন সিঁদুর পরা উচিত মহিলাদের?

 হিন্দু ধর্ম অনুযায়ী কেন সিঁদুর পরা উচিত মহিলাদের?


সিঁদুর বিবাহিত মহিলার প্রতীক। যা তারা স্বামীর মঙ্গলকামনা করে পরে থাকে। হিন্দু ধর্মে মনে করা হয়, স্ত্রী তার সিঁদুরের শক্তিতে স্বামীকে যেকোনো বিপদের থেকে বাঁচাতে পারে। তাই ধর্মে বিবাহিত মহিলাদের বিয়ের পর সিঁদুর পরা রীতি।


বিবাহিত হিন্দু নারীদের সিঁথিতে সিঁদুর পরা আনুমানিক 5000 বছর প্রাচীন হিন্দু ঐতিহ্যময় সংস্কৃতি। প্রাচীন রামায়ণে মাতা সীতা এবং মহাভারতে দ্রৌপদী সিঁথিতে সিঁদুর ব্যাবহারের স্পস্ট প্রমাণ আছে। রামায়ণে শ্রীরাম যখন মাতা সীতাকে বিবাহ করেন তখন তিনি মাতা সীতার সিঁথিতে সিঁদুর দান করেছিলেন। একই প্রমাণ আছে হরিবংশ পুরাণে যখন শ্রীকৃষ্ণ রুক্মিনীদেবীকে বিবাহ করেন, তখন তিনিও রুক্কিনীদেবী সিঁথিতে সিঁদুর দান করেছিলেন। এই পরম্পরাই এখনও অবধি হিন্দু বিবাহতে চলে আসছে। যেখানে স্বামী তার স্ত্রীকে সিঁথিতে সিঁদুর দান করে, স্ত্রী হিসাবে তাকে গ্রহণ করে। এছাড়া বেশকিছু ঐতিহাসিক এটা স্বীকার করে থাকেন।প্রাচীন হরপ্পা সভ্যতাতেও নারীরা সিঁদুর ব্যবহার করতো।


সিঁদুরকে মেয়েদের ১৬ সিঙ্গারের মধ্যে একটা মানা হয়। বিবাহিত মহিলাদের এক প্রকার প্রতীক হিসেবে দেখা হয় সিঁদুরকে। হিন্দু ধর্মে বলা হয় সিঁদুরের লাল রঙ স্বামীর দীর্ঘ জীবনের কামনা করে মহিলারা পরেন। লাল রঙ শক্তি ও ভালোবাসাকে বহন করে বলে মনে করা হয়। কিন্তু ধর্ম নয় বৈজ্ঞানিকরাও সিঁদুর পরার কিছু বৈজ্ঞানিক ব্যাখা দিয়েছেন। চলুন দেখে নেওয়া যাক হিন্দু ধর্ম মতে ও বৈজ্ঞানিক মতে সিঁদুর পরার ব্যাখা।


বৈজ্ঞানিক মতে কেন সিঁদুর পরা উচিত মহিলাদের?


সিঁদুর পরার কিছু বৈজ্ঞানিক দিকও রয়েছে। বৈজ্ঞানিক মতে, সিঁদুর মাথার নার্ভের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা পালন করে। মহিলারা যেখানে সিঁদুর পরেন, মাথার সেই জায়গায় গুরুত্বপূর্ণ নার্ভ থাকে। মেডিটেশনেও সাহায্য করে সিঁদুর। কিছু বিশেষজ্ঞ মনে করেন , কপালে সিঁদুর পড়লে এটি ঐ জায়গায় থাকা নার্ভ শান্ত রাখে এবং পিটুইটারি গ্রন্থির কার্যক্রমে পরোক্ষ সাহায্য করে।


সিঁদুরের রাসায়নিক সংকেত,


সিঁদুর একটি অম্লীয় বা এসিড জাতীয় পদার্থ। রক্তলাল রঙের এই পদার্থের রাসায়নিক সংকেত-  Pb3O4 । এর বহুল প্রচলিত রাসায়নিক নাম হলো প্লাম্বাসো প্লাম্বিক এসিড। এছাড়া একে লেড (II, IV) অক্সাইড এবং ট্রাইলেড টেট্রাঅক্সাইডও বলা হয়। লাল রঙের হওয়ায় একে ইংরেজিতে Red Lead ও বলা হয়ে থাকে। এগুলো ছাড়াও এর আরো প্রায় ১০ টি Chemical Synonym রয়েছে। এটি মূলত সীসার একটি অক্সাইড যৌগ। এর আণবিক গঠন জটিল ধরণের। এর গলনাংক ৫৫০°C তাপমাত্রার অধিক। এটি পানিতে অদ্রবণীয় কিন্ত এসিডে আংশিক দ্রবণীয়। 


সনাতনী নারীদের সিঁথিতে সিঁদুর পরার মধ্যে বেশ কয়েকটি কারণ নিহিত রয়েছে,


১. সিঁদুর পরলে প্রথম দৃষ্টিতেই বলে দেওয়া যায় ঐ নারী বিবাহিত। তার স্বামী রয়েছে। সে কারণে অন্য পুরুষের লোভাতুর, লোলুপ দৃষ্টি প্রতিহত হয়। হিন্দু নারীরা বিশ্বাস করেন সিঁদুরে স্বামীর মঙ্গল চিহ্ন রয়েছে।


২. সিঁদুর দেওয়ার সময় নারীরা নিচের দিকে নয়, ঊর্ধ্বায়ণ করে দেন। কেন? সিঁদুর ঊর্ধ্বায়ণের মাধ্যমে নারীরা স্বামীর আয়ু বৃদ্ধির প্রার্থনা করেন।


৩. সৌন্দর্যগত কারণেও সিঁদুর ব্যবহার করেন হিন্দু নারীরা। সিঁদুর পরলে নিশ্চিতভাবেই নারীদের দেখতে আরও সুন্দর লাগে। এ কারণে বর্তমানে অনেক অহিন্দু নারীও সিঁদুর পরেন।


৪. হিন্দু নারীর সিঁদুর পরা নিয়ে সাংস্কৃতিক নৃতত্ত্ব ভিন্ন কথা বলে। সেই বিদ্যার বিশেষজ্ঞদের মতে, লাল বর্ণের সিঁদুর কপালে ধারণ করার অর্থ জড়িয়ে রয়েছে আদিম উর্বরাশক্তির উপাসনার মধ্যে। হিন্দু ধর্ম বলে আজ যা পরিচিত, তার উৎস এক কৌম সমাজে। সেখানে গাছ, পাথর, মাটি ইত্যাদিকে প্রাকৃতিক শক্তির প্রতীক বলে মনে করা হত। আর তাদের কাছে লাল রংটি ছিল সৃষ্টির প্রতীক। 


সেই আদিম কাল থেকেই লাল সিঁদুরকে ভারতীয়রা বেছে নেন তাঁদের একান্ত প্রসাধন হিসেবে। বিবাহিতা মহিলাদের ললাটে কুঙ্কুম তাঁদের সন্তানধারণক্ষমতা হিসেবেই বর্ণনা করে।


৫. শাস্ত্র অনুযায়ী, লাল কুঙ্কুম শক্তির প্রতীক। মানব শরীরের বিভিন্ন স্থানে বিভিন্ন দেবতা অবস্থান করেন। ললাটে অধিষ্ঠান করেন ব্রহ্মা। লাল কুঙ্কুম ব্রহ্মাকে তুষ্ট করার জন্য ব্যবহৃত হয়।