সোমবার, ১৭ আগস্ট, ২০২০

সনাতন ধর্মের বিভিন্ন ঋষি-মুনি ও তাঁদের অবিস্মরণীয় অবদান?

*সনাতন ধর্মের বিভিন্ন ঋষি-মুনি ও তাঁদের অবিস্মরণীয় অবদান? 



প্রাচীন ভারতবর্ষ অনেক পূণ্যাতনা ঋষি-মুনিদের আবাসভূমি। আমরা হয়তো মনে করতে পারি যে, এনারা শুধু ধর্মীয় বিষয়ে মগ্ন থাকতেন। কিন্তু আজ আমরা এমন কিছু বিষয় সম্মন্ধে জানাব যা নিয়ে খুবই কম আলোচনা হয়েছে। অথচ খুবই আশ্চর্যের বিষয় সেই বিষয়গুলো থেকে ধরণা নিয়ে পশ্চিমারা আজ সভ্যতার শীর্ষে। আর আমরা পড়ে আছি অজ্ঞতার অন্ধকারে।

♣ঋষি ভরদ্বাজ: 

"শাস্ত্রজ্ঞ এই ঋষি অস্ত্রশাত্র, নীতিশাত্র, চিকিৎসা শাস্ত্রে অনেক অবদান রাখেন। তবে তাঁর সম্পর্কে সবচেয়ে গৌরব করার তথ্য হলো বৈদিক যুগেই তিনি বায়ুযানের (আজকের বিমান) কথা বলে গেছেন।

♣পতঞ্জলি:

আধুনিক যোগবিজ্ঞানের জনক। তার 'যোগসুত্র' গ্রন্থটি যা সারাবিশ্বে জনপ্রিয়।

♣আর্যভট্ট:

গণিত ও জোতিষশাস্ত্রের বিখ্যাত পন্ডিত। তাঁর রচিত "আর্যসিদ্ধান্ত" গ্রন্থটি গণিতবিদ্যার জন্য এক আশীর্বাদ। তার  উল্লেখযোগ্য অবদানের একটি হচ্ছে  দশমিক স্থানিক  অংক পাতন পদ্ধতি  ও  শূণ্য এর আবিষ্কার। এছাড়াও  হ সংখ্যক স্বাভাবিক  সংখ্যার বর্গ ও ঘনের সমষ্টি নির্নয়, আধুনিক ত্রিকোণমিতির সূত্রপাত- এ  ঋষির হাত ধরেই হয়েছিলো। জোতির্বিদ্যায় দিন-রাত্রি গণনার জন্য ঔদায়িক ও অর্ধ-রাত্রিক পদ্ধতি আবিষ্কার করেন। চন্দ্র ও সূর্য গ্রহণ এবং দিন-রাত্রির প্রকৃত কারন তিনিই প্রথম ব্যাখ্যা করেন। সপ্তাহের ৭ দিনের নামকরণ তারই করা। দিনের দৈর্ঘ্য ২৩ ঘন্টা ৫৬ মিনিট ৪.০৯১ সেকেন্ড- তাঁরই মস্তিষ্ক প্রসূত। আযভট্ট রচিত আর্যভট্টীয়  নামক গ্রন্থে দ্বিঘাত প্রথম মাত্রার অনির্ণেয় সমীকরণের সমাধান ও π (পাই) এর নির্ভুল মানের উল্লেখ পাওয়া যায়। প্রাচীন ভারতীয় পন্ডিতেরা π এর মান ৩.১৬২৩ নির্ণয় করেছিলেন। ভাস্করাচার্য ২২/৭ কে π এর মান হিসেবে প্রচার করেন। বর্গমূল নির্ণেয়রর পদ্ধতিও আর্যভট্ট এর আবিষ্কার। আর্যভট্টই দশমিক সংখ্যা পদ্ধতির সর্বপ্রাচীন আবিষ্কারক। আর্যভট্ট নির্ভুলভাবে পৃথিবীর ব্যাস নির্ণয় করতে সমর্থ হন।

♣শুল্ব সুত্র:

বৈদিক যুগে জ্যামিতির এক গুরুত্বপূর্ণ অংশের নাম স্রৌত - সুত্র আর একটি বিশেষ শাখা হচ্ছে শুল্ব সুত্র। শুল্ব শব্দের অর্থ হলো সুতা। বৈদিক যুগে সুতার সাহায্যে মাপজোগ করা হত। যারা এই মাপজোগ করতো তাদের বলা হত শুল্ববিদ। খ্যাতনামা শুল্ববিদ ছিলেন বৌধায়ন, আপস্তম্ভ এবং কাত্যায়ন।

♣চরক:

প্রাচীন ভারতের বিখ্যাত শল্যবিদ ও চরকসংহিতার রচয়িতা। চরক সংকলিত চরক সংহিতা আয়ুর্বেদ চিকিৎসাবিদ্যার আকর গ্রন্থ। এতে বিভিন্ন রোগের কারণ, লক্ষণ, চিকিৎসাগুলো সংকলন করেন চরক। বইটিতে ১২০টি অধ্যায় রয়েছে, যা আবার ৮ অংশে বিভক্ত। অংশগুলো হলো: সূত্র-স্থানম্, শারীর-স্থানম্, ইন্দ্রীয়-স্থানম্, কল্প-স্থানম্, সিদ্ধি-স্থানম্, বিমান-স্থানম্, নিদান-স্থানম্, চিকিৎসা-স্থানম্।
এই বইয়ের মূল ভাষা ছিল সংস্কৃত। পরবর্তীকালে তা আরবি, গ্রিক, ল্যাটিন ভাষায় অনূদিত হয়ে সারা পৃথিবীতে ছড়িয়ে পড়ে। বিখ্যাত শল্য চিকিৎসক ইবনে সিনা আরবিতে অনূদিত চরক সংহিতা এবং তৎকালীন আরেকটি চিকিৎসা আকরগ্রন্থ সুশ্রুত সংহিতা থেকে অনুপ্রাণিত হয়েছিলেন। আচার্য চরক তাঁকে অনেকে ঔষধ তত্ত্বের জনক বলেন। তাঁর নিয়ম, নিরীক্ষা, আবিষ্কার হাজার বছর পরে আজও সত্য বলে টিকে আছে। যখন ইউরোপে শরীরবিদ্যা নিয়ে বিভ্রান্তিকর তত্ত্ব প্রচলিত ছিল, তখনই চরক তার বৈজ্ঞানিক অনুসন্ধিৎসা দিয়ে শরীরবিদ্যা, ভ্রুণবিদ্যা, ঔষধ বিদ্যা, রক্ত সঞ্চালন পদ্ধতি, ডায়াবেটিক, যক্ষ্মা, হৃদরোগ স¤পর্কে নির্ভুল ব্যাখ্যা ও চিকিৎসা পদ্ধতির গোড়াপত্তন করেন। চরক সংহিতায় তিনি ১ লক্ষ ঔষধি গাছের বর্ণনা দিয়েছেন। তিনি মন ও দেহের ওপর খাদ্যের প্রভাব সম্পর্কেও আলোচনা করেছেন। বর্তমানের কার্ডিওলজি, এম্ব্রায়োলজি, ইটিওলজি -ইত্যাদি বিষয়ে তিনিই প্রথম ধারণা দেন। "Prevention is better than cure" প্রসঙ্গে বহু আগেই বলে গেছেন তিনি, চিকিৎসকের গুনাবলী প্রসঙ্গে তার উক্তি -"চিকিৎসককে শুধু বিদ্বান ও জ্ঞানী হলেই চলবে না, রোগীর বাড়িতে গিয়ে আপনজনের মতো আচরণ করতে হবে। যে চিকিৎসক লোভের বশে চিকিৎসাকে পণ্য হিসেবে বিক্রি করেন, তিনি স্বর্ণের বদলে ছাইভষ্মের প্রত্যাশা করেন"।

♣আচার্য সুশ্রুত:

ঋষি বিশ্বামিত্রের পুত্র ছিলেন সুশ্রুত, শল্যতন্ত্র তথা "সুশ্রুত সংহিতার" রচিয়তা, প্লাস্টিক সার্জারির জনক বলা হয়। "শল্যতন্ত্রে" তিনি আর্টিফিসিয়াল লিম্ব, ক্যাটারাক্ট, ইউরিনারি স্ট্রোন্স, ফ্যাকচার্স এবং প্লাস্টিক সার্জারি নিয়ে বলে গেছেন। সার্জারি ক্ষেত্রে কাটিং পিয়াসিং, ওপেনিং, স্ক্রেচিং, ইনসার্টিং, স্ট্রেচিং ইত্যাদির কথা তুলে ধরেছেন। "পূর্বতন্ত্র ও উত্তরতন্ত্র" এই দুই খন্ডে লেখা বইয়ে মেডিসিন, গেরিয়াট্রিক্স, পেডিয়াট্রিক্স, নাক-কান-গলা ও চোখের অসুখ, এফ্রোদিজিয়াক্স, টক্সিকোলজি এবং সাইকিয়াট্রি। তাঁর লিখিত "সুশ্রুত সংহিতা" বিভিন্ন ভাষায় অনুদিত হয়। প্রাচীন হিন্দু বিজ্ঞানী সুশ্রুতই ছিলেন প্রথম ক্ষার প্রস্তুতকারী ও প্রস্তুত প্রণালীর জনক।

♣চানক্য:

অর্থশাস্ত্রের রচয়িতা হিসেবে সমধিক প্রসিদ্ধ। চন্দ্রগুপ্ত মৌর্যের প্রধান উপদেষ্টা। 

♣সয়নাচার্য(?-১৩৮৭):

একজন বেদ ভাষ্যকর। বেদের সকল অংশের উপর তিনি আলোচনা তথা ভাষ্য রচনা করেন। সায়ন এর প্রধান কাজ তাঁর "বেদার্থ প্রকাশ"। বেদের ব্যাখ্যায় ঋগে¦দ (১/৫০/৪) আলোর গতি নির্ণয়ও সায়ন গুরুত্বপূর্ণ  অবদান রেখেছেন।

♣বরাহমিহির:

প্রাচীন ভারতে বিজ্ঞানের অগ্রযাত্রায় অন্যতম ভূমিকা রাখেন বরাহমিহির। জ্যোতির্বিজ্ঞান চর্চায় এক নতুন দিগন্তের সূচনা নিয়ে আসেন তিনি। 'বৃহত সংহিতা' নামক পুস্তকের ১০৬ অধ্যায়ে তিনি গ্রহের পরিভ্রমণ, গ্রহণ, বৃষ্টি, মেঘ, শস্যের বৃদ্ধি ইত্যাদি বিষয়ে লিখেছেন। তিনি পৃথিবীর গোলাকার আকৃতির ধারণা দেন। বরাহমিহিরই প্রথম যিনি দাবি করেন "কোন একটা বিশেষ শক্তি আমাদের শরীরকে গোলাকার পৃথিবীর সাথে আটকে রেখেছে"। ত্রিকোণমিতি ও বীজগণিতের উন্নয়নে বরাহমিহির গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন। হ সংখ্যক বস্তু থেকে ৎ সংখ্যক বস্তু পছন্দ করার সমস্যা থেকে তিনি একটি সারণি তৈরি করেন যা বহুকাল পরে পাশ্চাত্যে প্যাসকেলের ত্রিভুজ নামে পুনরাবিষ্কার হয়। মহান এই জ্যোতির্বিজ্ঞানী ৫৮৭ খ্রিস্টাব্দে পরলোকগমন করেন।

♣আচার্য কণাদ:

বেদের পরে যে সনাতন ধর্মাবলম্বী মহর্ষি সর্বপ্রথম পরমাণুর ধারনা দেন তিনি হচ্ছেন আচার্য কণাদ। বস্তুকে খন্ডবিখন্ড করতে করতে তার ক্ষুদ্রতম অবিভাজ্য অংশে পৌঁছানো সম্ভব। এ মৌলিকতম অবিভাজ্য অংশটিকে বলে পরমাণু। একমাত্র পরমাণু নিত্য পদার্থ, তাহার কারণ নাই- সদকারণবন্নিত্যম্। এ কথাগুলো বহু পুরনো এক ভারতীয় ঋষির মুখ নিঃসৃত সুক্ত থেকে আহূত। সেই ঋষি প্রবরের নাম মহর্ষি কণাদ। এক শস্যদানা নিয়ে অবচেতনে চিন্তা করতে গিয়ে তিনি দেখলেন, সেই শস্যকে যতই ভাঙা হোক না কেন অন্য কোনো উপাদান সেখানে নেই। সেই থেকেই তিনি পদার্থে পরমাণু সম্পর্কে ধারণায় উপনীত হন। 

♣ভাষ্করাচার্য:

বিখ্যাত ভারতীয় গণিতবিদ ও জ্যোতির্বিদ ভাষ্করাচার্য শক্। ৩৬ বছর বয়সে আচার্য ভাষ্করাচার্য 'সিদ্ধান্ত শিরোমণি' নামক একটি গ্রন্থ লিখেন যা লীলাবতী, বীজগণিত, গ্রহগণিত ও গোলধ্যায় - এই চার ভাগে বিভক্ত। লীলাবতী ১৩ অধ্যায় বিশিষ্ট পাটিগণিত বই যেখানে যোগবিয়োগ, পরিমাপ, প্রবৃদ্ধি, মুনাফা, বিন্যাস প্রভৃতি বিষয় অন্তর্ভুক্ত আছে। ১২ অধ্যায় বিশিষ্ট বীজগণিতে শুন্য, অসীম, ধনাত্বক, ঋণাত্বক সংখ্যা, দ্বিঘাত, ত্রিঘাত ও চতুর্ঘাত সমীকরণ ইত্যাদি অন্তর্ভুক্ত আছে। ভাষ্করাচার্য চক্রভাল পদ্ধতিতে ধী*২ + নী + প =  ু সমীকরণ সমাধান করেছিলেন যা বহুকাল পরেও ইউরোপে তুলনামূলক জটিল পদ্ধতিতে আবিষ্কৃত হয়েছে। ক্যালকুলাসে ভাষ্করাচার্যের বিপুল অবদান রয়েছে। তিনি দিফারেনশিয়াল ক্যালকুলাস আবিষ্কার করে জ্যোতির্বিদ্যায় এর প্রয়োগ করেছিলেন। তিনিই প্রথম অসীমের ধারণা দেন- সসীম কোন সংখ্যাকে শুন্য দিয়ে ভাগ করে অসীম পাওয়া যায়। ভাষ্করাচার্য পৃথিবী কর্তৃক সূর্যকে প্রদক্ষিণের সময় হিসেব করেছিলেন ৩৬৫.২৫৮৮ দিন যা বর্তমানে ৩৬৫.২৫৬৩ দিন হিসেবে স্বীকৃত। তিনি দুইটি ভিন্ন পদ্ধতিতে পীথাগোরাসের উপপাদ্যের প্রমাণ করেছিলেন এবং ধ*২ + ন*২ = প*২ এই সিদ্ধান্তে উপনীত হন।






♣ব্রহ্মগুপ্ত:

মহান বিজ্ঞানী স্যার আইজ্যাক নিউটনের প্রায় এক হাজার বছর আগে ভারতের রাজস্থানের ভিনমাল নামের এক গ্রামে বসে দ্রাবিড় বংশদ্ভুদ এক গণিতবিদ বলেছিলেন, সকল বস্তুই ভূমিতে পতিত হয় কারন এই গ্রহের বৈশিষ্ঠ্যই এই যে সকল ভারী বস্তুসমুহকে ইহা কেন্দ্রের দিকে আকর্ষণ করে। কি অসম্ভব কথা !
এই অসামান্য গণিতবিদ ও জ্যোতির্বিজ্ঞানীর নাম ছিল ব্রহ্মগুপ্ত। তিনি তাঁর বই ব্রহ্মস্ফুটসিদ্ধান্তে মোট ২৪ টি চ্যাপ্টার লেখেন, যার মধ্যে শেষের ১৪ টি কে আসলে প্রথম ১০ টির এক্সটেনশন বলা যেতে পারে। আল-বিরুণী তার রচিত বই তারিক আল-হিন্দ এ উল্লেখ করেছেন যে আরব দুনিয়া ভারতের জ্যোতির্বিজ্ঞানের সঙ্গে প্রথম পরিচিত হয় “ব্রহ্মস্ফুট সিদ্ধান্তের” মাধ্যমে। ব্রহ্মস্ফুট সিদ্ধান্তেই প্রথম উল্লেখ করা হলো শূণ্য নামের এক ধারণা। প্রথম স্বীকৃতি দেয়া হলো শূণ্যকে একটি সংখ্যা হিসেবে। ব্যবিলনিয়ানরা যেই শূণ্যকে শুধুই দেখত অন্য সংখ্যার বিকল্প হিসেবে অথবা রোমানরা যেই শূণ্যকে দেখত কোনো পরিমাপের ঘাটতি বোঝাতে। ব্রহ্মগুপ্তই প্রথম সবাইকে আলাদা ডিজিট হিসাবে ০ এর সাথে পরিচয় করিয়ে দেন।

ব্রহ্মগুপ্ত তাঁর এ বইয়ে যে সিদ্ধান্তগুলো দেন, তা এরকম:

১। দুটো পজিটিভ নাম্বারের যোগফল পজিটিভ।

২। দুটো নেগেটিভ নাম্বারের যোগফল নেগেটিভ।

৩। ০ ও একটি নেগেটিভ নাম্বারের যোগফল নেগেটিভ।

৪। ০ ও একটি পজিটিভ নাম্বারের যোগফল পজিটিভ।

৫। ০ ও ০ এর যোগফল ০।

৬। দুটো পজিটিভ ও নেগেটিভ নাম্বারের যোগফল আসলে তাদের বিয়োগফল। আর যদি তারা সমান হয়, তাহলে যোগফল ০।

৭। দুটো পজিটিভ নাম্বারের বিয়োগের ক্ষেত্রে বড় থেকে ছোট বাদ দিতে হবে। দুটো নেগেটিভ নাম্বারের বিয়োগের ক্ষেত্রে বড় থেকে ছোট বাদ দিতে হবে।

৯। যদি ছোট থেকে বড় নাম্বার বিয়োগ দেয়া হয়, তাহলে বিয়োগফল উল্টে যাবে।

১০। যদি নেগেটিভ নাম্বার থেকে পজিটিভ নাম্বার বিযোগ করতে হয় বা পজিটিভ নাম্বার থেকে নেগেটিভ নাম্বার বিয়োগ করতে হয়, তাহলে আসলে তাদের যোগ করতে হবে।

১১। একটি নেগেটিভ ও একটি পজিটিভ নাম্বারের গুণফল নেগেটিভ।

১২। দুটো নেগেটিভ নাম্বারের গুণফল পজিটিভ।

১৩। দুটো পজিটিভ নাম্বারের গুণফল পজিটিভ।

১৪। দুটো পজিটিভ নাম্বারের ভাগফল এবং দুটো নেগেটিভ নাম্বারের ভাগফল উভয়ই পজিটিভ।

১৫। পজিটিভ নাম্বারকে নেগেটিভ নাম্বার দিয়ে ভাগ করলে নেগেটিভ পাওয়া যাবে, আবার নেগেটিভকে পজিটিভ দিয়ে ভাগ দিলেও নেগেটিভ পাওয়া যাবে।

১৬। পজিটিভ বা নেগেটিভ নাম্বারকে ০ দিয়ে ভাগ করলে ০ হর বিশিষ্ট ভগ্নাংশ পাওয়া যাবে।

১৭। ০ কে পজিটিভ বা নেগেটিভ দিয়ে ভাগ করলে ০ ই পাওয়া যাবে, অথবা ০ লব বিশিষ্ট ভগ্নাংশ পাওয়া যাবে।

১৮। ০ কে ০ দিয়ে ভাগ করলে ০ পাওয়া যাবে।

পূর্বে অনেক সভ্যতায় গণিতের বেসিক চারটা অপারেশন (যোগ, বিয়োগ, গুণ, ভাগ) পরিচিত থাকলেও, আমরা এখন যেভাবে এই অপারেশনগুলো করি, তা মূলত আরব-ভারতীয় সংখ্যা পদ্ধতির আবিষ্কার, যা প্রথম পাওয়া যায় ব্রহ্মস্ফুতসিদ্ধান্তে। ব্রহ্মস্ফুতসিদ্ধান্তে গুণকে বলা হয়েছে গোমূত্রিকা। বইটির দ্বাদশ অধ্যায়ের গণনা নামক অনুচ্ছেদে ব্রহ্মগুপ্ত ভগ্নাংশের উপর বিস্তারিত আলোচনা করেন। এখানে তিনি বর্গ, বর্গমূল, ঘণ ও ঘণমূল নিয়েও আলোচনা করেন।
ব্রহ্মগুপ্ত তাঁর বইয়ের অষ্টাদশ অধ্যায়ে (বীজগণিত) লিনিয়ার ইকুয়েশনের (একমাত্রিক সমীকরণ) সমাধান নিয়ে আলোচনা করেন। এখানে তিনি বর্গ, বর্গমূল, ঘণ ও ঘণমূল নিয়েও আলোচনা করেন। ব্রহ্মগুপ্ত অন্তঃবৃত্তস্থ চতুর্ভুজের ক্ষেত্রফল বের করার একটি সূত্র আবিষ্কার করেন, যা সাধারণ ভাবে ব্রহ্মগুপ্তের সূত্র নামে পরিচিত। যারা সাইন্সের ছাত্র, তারা সবাই এই সূত্রটি ম্যাট্রিক বা ইন্টারে পড়েছি। এই সূত্র অনুযায়ী, কোনো অন্তঃবৃত্তস্থ চতুর্ভুজের ক্ষেত্রফল: √(s-a)(s-b)(s-c)(s-d)
ব্রহ্মগুপ্তের অসাধারণ কাজগুলোর মধ্যে অন্যতম হলো এই উপপাদ্য, যা এরূপ: যদি কোনো অন্তঃবৃত্তস্থ চতুর্ভুজের কর্ণদ্বয় পরস্পর লম্বভাবে অবস্থিত হয়, তাহলে কর্ণদ্বয়ের ছেদবিন্দু হতে কোনো বাহুর উপর অঙ্কিত লম্বের বর্ধিতাংশ বিপরীত বাহুকে সমদ্বিখন্ডিত করে। ব্রহ্মগুপ্ত সমাধান করেছেন linear equation, quadratic equation এর দুটি সমমূল্যের সমাধান, পথ দেখিয়েছেন indeterminate equation সমাধানের। চতুর্ভুজের ক্ষেত্রফল, অ্যারিথমাটিক সিরিজ এবং কিছু বিশেষ ধরণের ডায়োফ্যান্টাইন সমীকরণের সমাধানও তিনি করেছেন। পাই (π) এর গুরুত্বপূর্ণ মানের অনেক কাছাকাছি গিয়েছেন। প্রচুর কাজ করেছেন জ্যামিতিক আকার-আকৃতি নিয়ে। ভারতীয় গণিতশাস্ত্রে পাটি-গণিতা (Òmathematics of procedures, Ó or algorithms) এবং বীজা-গণিতা (Òmathematics of seeds, Ó or equations)  এর ভিত্তি তো তার হাত ধরেই। আরব জ্যোতির্বিদগণ ভারতীয় জ্যোতির্বিদ্যা সম্পর্কে যা জেনেছেন, তার বেশিরভাগই ব্রহ্মস্ফুতসিদ্ধান্তের মাধ্যমে। পূর্বে ভাবা হত পৃথিবী থেকে চাঁদের দূরত্ব পৃথিবী থেকে সূর্যের দূরত্বের চেয়ে বেশি। ব্রহ্মগুপ্ত তাঁর গ্রন্থের সপ্তম অধ্যায়ে (চাঁদের অর্ধাকৃতি) এই ভুল ধারণা খন্ডন করেন। জ্যোতির্বিদ্যায় তাঁর আরো যেসব গবেষণা আছে, তার মধ্যে অন্যতম হলো সময়ের সাথে নক্ষত্রের অবস্থান নির্ণয়ের পদ্ধতি, নক্ষত্রের উদয় ও অস্ত সম্পর্কিত গবেষণা এবং সূর্যগ্রহণ ও চন্দ্রগ্রহণ সম্পর্কিত গণনা। পৌরাণিক কাহিনী অনুযায়ী পৃথিবীকে সমতল ভাবা হত, যার বিরোধিতা করেন ব্রহ্মগুপ্ত। তিনি বলেন পৃথিবী ও স্বর্গ গোলাকার এবং পৃথিবী নড়ছে। আল বিরুনী তাঁর তারিখ আল হিন্দ (ভারতের ইতিহাস) বইয়ে উল্লেখ করেন যে, তৎকালীন অনেকেই ব্রহ্মগুপ্তের মন্তব্যের বিরোধিতা করেন এই বলে যে পৃথিবী যদি গোলাকার হত, তাহলে তার থেকে গাছপালা, পাথর পড়ে যেতো। ব্রহ্মগুপ্ত এসব ধারণাও খন্ডন করেন। তিনি বলেন, "ভারি বস্তুসমূহ পৃথিবীর কেন্দ্রের দিকে আকৃষ্ট হয়। পানির ধর্ম যেমন গড়িয়ে যাওয়া, আগুনের ধর্ম যেমন জ্বলা, বাতাসের ধর্ম যেমন বয়ে চলা, তেমনি পৃথিবীর ধর্ম বস্তুসমূহকে আকর্ষণ করা ও ধরে রাখা। এ কারণেই ভারি বস্তুকে উপর থেকে ছেড়ে দিলে তা নিচে পড়ে যায়।" এভাবেই তিনিই প্রথম অভিকর্ষের ধারণা দেন।

♣শালিহোত্র:

পৃথিবীর সর্বপ্রথম পশু চিকিৎসক ছিলেন শালিহোত্র (২৩৫০ খ্রিঃ)। তিনি অসম্ভব মেধাবী ও ধর্মপ্রাণ। এ হিন্দু বিজ্ঞানী অতুলনীয় অবদান রাখেন। প্রাচীন যুগে ঘোড়াও হাতি যুদ্ধ বিগ্রহের জন্য বড় স¤পদ ছিল। প্রাচীন ভারতে মানুষের চিকিৎসায় বিজ্ঞানী চড়ক ও সুশ্রুত যেমন অবদান রেখেছেন, তেমনিভাবে  শালিহোত্র পশু চিকিৎসায় অপরিসীম অবদান রেখেছেন। ঘোড়া ও হাতির চিকিৎসা পদ্ধতির মাধ্যমে হিন্দু বিজ্ঞানী শালিহোত্রের হাত ধরেই সৃষ্টি হয়েছে বিশ্বের প্রথম পশু চিকিৎসা বিদ্যা।  তিনি শালিহোত্র সংহিতা নামে একটি গ্রন্থ রচনা করেন। এই শালিহোত্র সংহিতায়  ঘোড়া ও হাতির রোগ, শরীরবিদ্যা, শল্যবিদ্যা ও রোগ প্রতিরোধ ও প্রতিকারের উপায় ১২০০০ শ্লোকে বর্ণনা হয়েছে।