সোমবার, ১৭ আগস্ট, ২০২০

হিন্দুদের বিভিন্ন মাঙ্গিলক অনুষ্ঠানে কেন ধান-দূর্বা দিয়ে আশীর্বাদ করা হয়?

*হিন্দুদের বিভিন্ন মাঙ্গিলক অনুষ্ঠানে কেন ধান-দূর্বা দিয়ে আশীর্বাদ করা হয়?

প্রাচীন আর্যসমাজে ধানই ছিল ধনের প্রতীক। আর এই এখনও ভারতীয় সমাজ কৃষিপ্রধান। সেখানে কৃষকদের প্রধান সম্পদ ধান। অন্যদিকে দূর্বা হচ্ছে দীর্ঘায়ুর প্রতীক। দূর্বা সহজে মরে না, প্রচন্ড রোদ বা বর্ষায় পঁচে গেলেও আবার দূর্বা বেঁচে ওঠে। আর একারণে দূর্বার আরেক নাম অমর। ধান-দূর্বা মস্তকে দেয়া অর্থ স¤পদশালী হও ও দীর্ঘায়ু লাভ কর। কিন্তু যিনি আশীর্বাদ করবেন তিনি এই প্রতীকের মর্ম না বুঝলে এই আশীর্বাদ আনুষ্ঠানিকতায় পর্যবসিত হয়, যেভাবে হিন্দুদের অনেক ধর্ম-কর্ম প্রাণহীন আনুষ্ঠানিকতায় ভরে উঠেছে।
তথ্যসূত্র: জগদীশ চন্দ্র ঘোষ, শ্রীমদ্ভগবদ্গীতা, পৃষ্ঠা নং: ১৫৪






 *হোলি উৎসব ও এর তাৎপর্য

দ্বৈত্যরাজ হিরন্যকিশপুর ছেলে প্রহ্লাদ অসুর বংশে জন্মগ্রহণ করেও পরম ধার্মিক ছিলেন। তাকে যখন বিভিন্ন ভাবে চেষ্টা করেও হত্যা করা যাচ্ছে না তখন হিরন্যকিশপুর বোন হোলিকা প্রহ্লাদকে নিয়ে আগুনে প্রবেশের সিদ্ধান্ত নেন। কারন হোলিকা এই বর পেয়েছিলো যে, আগুনে তার কোনো ক্ষতি হবে না। কিন্তু অন্যায় কাজে শক্তি প্রয়োগ করায় হোলিকা প্রহ্লাদ কে নিয়ে আগুনে প্রবেশ করলে বিষ্ণুর কৃপায় প্রহ্লাদ অগ্নিকুন্ড থেকেও অক্ষত অবস্থায় ফিরে আসে। কিন্তু হোলিকা পুড়ে নিঃশেষ হয়ে যায়। 
এই থেকে হোলি পূজার উৎপত্তি। অঞ্চলভেদে হোলি বা দোল উৎসবের ভিন্ন ব্যাখা কিংবা এর সাথে সম্পৃক্ত লোককথার ভিন্নতা পাওয়া যেতে পারে কিন্তু উদ্যাপনের রীতি এক।
অন্যদিক বসন্তের পূর্ণিমার এই দিনে ভগবান শ্রীকৃষ্ণ কেশি নামক অসুরকে বধ করেন। কোথাও কোথাও অরিষ্টাসুর নামক অসুর বধের কথাও আছে। অন্যায়কারী, অত্যাচারী এই অসুরকে বধ করার পর সকলে আনন্দ করে। এই অন্যায় শক্তিকে ধ্বংসের আনন্দ মহা আনন্দে পরিণত হয়। হোলি বা দোল উৎসব রূপ নেয় ধর্মের বিজয় উৎসবে।
বাংলায় আমরা বলি 'দোলযাত্রা 'আর পশ্চিম ও মধ্যভারতে বলে 'হোলি'। রঙ উৎসবের আগের দিন "হোলিকা দহন" হয় অত্যন্ত ধুমধাম ভাবে। দোল হিন্দু সভ্যতার অন্যতম প্রাচীন উৎসব। নারদ পুরান, ভবিষ্যপুরান ও জৈমিনি মীমাংসায় রং উৎসবের বিবরণ পাওয়া যায়। ৩০০ খৃষ্টপূর্বাব্দের এক শিলালিপিতে রাজা হর্ষবর্ধন কর্তৃক (হোলিকা উৎসব) পালনের উল্লেখ পাওয়া যায়। তার নাটক রতœাবলিতেও হোলিকা উৎসবের উল্লেখ রয়েছে।
হোলি স¤পর্কে বড়ো একটি তথ্য সকলে এড়িয়ে যায়। যার সাথে ধর্ম ও সমাজ ওতোপ্রোতভাবে জড়িত। আর একটি উৎসব বা দিন আরও পবিত্র হয়ে ওঠে যদি উক্ত দিনে পৃথিবী মহান পুরুষের জন্ম দেয়। বাঙালি তথা হিন্দু সমাজের অন্যতম মহাপুরুষ শ্রীচৈতন্যের জন্মতিথি হচ্ছে এই পূর্ণিমা তিথি তথা হোলি তিথি। এই মহান পুরুষের জন্ম উৎসবের মাত্রাকে আরও বাড়িয়ে দিয়েছে। শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভুর জন্ম বলে একে গৌরপূর্ণিমা নামেও অভিহিত করা হয়।
অন্যায়কে পরাজিত করার আনন্দে সকলের মন রাঙিয়ে উঠুক। মহান পুরুষের আবির্ভাবে সকলের মন আনন্দে নেচে উঠুক অবশ্যই অসামজিকতায় নয়।






 *সনাতন ধর্মের মতে প্রতিদিন কয়বার প্রার্থনা করতে হয়?

সনাতন ধর্মের মতে প্রতিদিন “তিনবার” প্রার্থনা করতে হয়।






 *আততায়ী?

বেদের অনুশাসন অনুযায়ী শক্র (আততায়ী) ছয় প্রকার।
১। যে বিষ প্রয়োগ করে
২। যে ঘরে আগুন লাগায়
৩। যে মারাত্মক অস্ত্র নিয়ে আক্রমণ করে
৪। যে ধন সম্পদ লুণ্ঠন করে
৫। যে অন্যের জমি দখল করে
৬। যে বিবাহিত স্ত্রীকে হরণ করে
এই ছয় ধরনের শক্রকে আততায়ী বলা হয়েছে। এই ধরনের আততায়ীদের অবিলম্বে হত্যা করার নির্দেশ শাস্ত্রে দেয়া হয়েছে এবং এদের হত্যা করলে কোন পাপ হবেনা। এই ধরনের শত্রুকে সমূলে বিনাশ করাটাই মানুষের পক্ষে স্বাভাবিক। এক্ষেত্রে আমরা রামায়ণের রাবন ও রামের উদাহরণ দিতে পারি।
এদের সম্পর্কে শাস্ত্রের নির্দেশ হচ্ছে- আততায়ী সর্বদাই বধ্য অর্থাৎ আততায়ী বধে কোন পাপ নেই। মনুসংহিতা - (৮/৩৫০-৫১)







 *আমি কেন ধর্মান্তরিত হবোনা?

১. স্বামী প্রণবানন্দ বলেছেন, "হীনং দোষরতি ইতি হিন্দুঃ" অর্থাৎ যিনি সমস্ত হীনতা নিচতাকে পরিত্যাগ করেছেন তিনি হিন্দু। অর্থাৎ যার ভেতর কোন হীন ভাবনা বা নীচ স্বভাব থাকে না সেই হিন্দু। হিন্দুধর্ম এমনই এক মহান আদর্শ বহন করে যা সবাইকে ভালোবাসতে শেখায়, মানবতা শেখায়। তাই আমি হিন্দু ধর্মকে নিয়ে গর্ববোধ করি। এই কারণে আমি ধর্মান্তরিত হব না।

২. স্বামী বিবেকানন্দ বলেছেন - গর্বের সাথে বলো আমি হিন্দু। একমাত্র হিন্দু ধর্মই সমগ্র ধর্ম, সমগ্র বিশ্বকে, বিশ্বের মানুষকে ভালবাসার কথা বলে। এমন মানবতাপূর্ণ, উদার শ্বাশত ধর্মের জন্য আমার গর্ব হয়, তাই আমি ধর্মান্তরিত হব না।

৩. শ্রীমদভগবদ গীতায় শ্রীভগবান অর্জুনকে বলেছেন,  
"শ্রেয়ান্ স্বধর্মো বিগুন: পরধর্মাৎ স্বনুষ্ঠিতাৎ
স্বভাব নিয়তং কর্ম কুর্বন্নাপ্নাতি কিলি¡যম।। "১৮/৪৭"
অর্থাৎ হে পার্থ উত্তমরূপে অনুষ্ঠিত পরধর্ম অপেক্ষা ও সম্যকরূপে অনুষ্ঠিত স্বধর্মই শ্রেয়। মানুষ স্বভাব বিহিত কর্ম করে কোন পাপ প্রাপ্ত হয় না। শ্রীভগবানের এই কথা স্মরণে করে আমি নিজ ধর্মের উপর দৃঢ় ও নিশ্চল বিশ্বাস রাখি, তাই আমি ধর্মান্তরিত হবো না।

৪. নিজ জাতির মাতা-পিতা গুরুজন আত্মীয়স্বজন আমার জন্য গর্ববোধ করেন। তারা কোন কষ্ট পাবে তা আমি কোনো ভাবেই মেনে নিতে পারবো না। তাদের আনন্দ, প্রীতি, সম্মান বৃদ্ধি করাই আমার ধর্ম। তাই নিজ ধর্ম ত্যাগ করে আমি কখনোই অন্য ধর্মকে মানতে পারব না।

৫. শ্রীভগবান গীতায় অর্জুনকে দৃঢ়কণ্ঠে বলেছেন,
"সর্বধর্মান পরিত্যাজ্যাং মামেকং শরনং ব্রজ।
অহং ত্বাং সর্বপাপেভ্যো মোক্ষয়িষ্যামি মা শুচঃ।।" গীতা -১৮/৬৬
হে পার্থ সর্ব ধর্ম পরিত্যাগ করে কেবল আমারই শরণাগত হও। আমি তোমাকে সকল পাপ হতে মুক্ত করব। তুমি শোক করোনা। শ্রীভগবানের এই আশ্বাস বাক্যই আমার অনুপ্রেরণা। তাই আমি আমার সর্বধর্মের প্রসূতি স্বরূপ হিন্দু ধর্ম ত্যাগ করে কখনোই ধর্মান্তরিত হবো না।